লন্ডন থেকে জমির উদ্দিন সুমন :
সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভাষা আন্দোলন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়।সর্ব ইউরোপিয়ান আ’লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম,সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন(এমপি), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ,যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ।
বক্তারা বলেন,১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার বিজ বপন করা হয়েছিলো। সেদিন অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছিল উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা। আর সেই ঘোষণায় রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালিরা।
মূলত ভাষার লড়াইটা হয়েছিল ঢাকাতে— কিন্তু সেই লড়াইয়ের বিস্তৃতি আজ গোটা বিশ্বে। ১৯৫২-র সেই জীবনদান বৃথা যায়নি। আর সে কারণে আফ্রিকার সিয়েরালিয়েনের শিশুরাও গেয়ে ওঠে— আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি সেখানে বাংলা ভাষা রাষ্টীয় মর্যাদা পেয়েছে।সিয়েরালিয়েনে আজ বাংলা দেশটির দ্বিতীয় অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আজীবন মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্বে, ১৯৪৮ সালে রাজপথে আন্দোলন ও কারাবরণ, পরে আইনসভার সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। এক কথায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পরপরই কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলে পূর্ব পাকিস্তানের পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণে সমবেত হয়েছিলেন কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী। সেখানে পাকিস্তানে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ভাষাবিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এ প্রসঙ্গে ভাষা সৈনিক গাজীউল হক ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘সম্মেলনের কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করেছিলেন সেদিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।’
এভাবেই ভাষার দাবি বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত থেকে তৎকালীন পূর্ববাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর সরাসরি ভাষা আন্দোলনে শরিক হন। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমকালীন রাজনীতিবিদসহ ১৪ জন ভাষা বীর সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য দাবিসংবলিত ২১ দফা দাবি নিয়ে একটি ইশতেহার প্রণয়ন করেছিলেন।
ওই ইশতেহারে ২১ দফা দাবির মধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ঐতিহাসিক এই ইশতেহারটি একটি ছোট পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল যার নাম ‘রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইশতেহার-ঐতিহাসিক দলিল।’ ওই পুস্তিকাটি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এই ইশতেহার প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য এবং তিনি ছিলেন অন্যতম স্বাক্ষরদাতা।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাশেম,ইতালি আ’ লীগের সভাপতি ইদ্রিস ফরাজি,জার্মান আওয়ামী লীগ সভাপতি বসিরুল আলম চৌধুরী সাবু,আ’লীগ নেতা রোমান মিয়া,অস্ট্রিয়া আ’লীগের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান,পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল আলম জসিম,নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শাহাদাত হোসেন তপন, সুইডেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড: ফরহাদ আলী খান, ফিনল্যান্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, আ’লীগ নেতা মোস্তফা জামান,যুক্তরাজ্য আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী,স্পেন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী,আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের আহবায়ক বেল্লাল হোসেন,বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ ইউরোপ চ্যাপ্টারের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া,ঢাকাটাইমস ইউরোপ ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক কমরেড খোন্দকার, ফিনল্যান্ড আ’লীগ নেতা হুমায়ন কবির প্রমূখ। অনুষ্ঠানটির সার্বিক কারিগরি সহযোগিতায় ছিলেন সিআরআই বাংলাদেশ এবং অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় অংশ পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ ইউরোপ চ্যাপ্টারের সাধারন সম্পাদক ও সুইডেন আ’লীগ নেতা হেদায়েতুল ইসলাম শেলী।