মিহিরুজ্জামান জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরা জেলায় এবার ৫৮১টি পূজা মন্ডপে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী রবিবার (১০ অক্টোবর) মহাপঞ্চমীতে সায়ংকালে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শারদীয় দুর্গোৎসব’। এই পুণ্যলগ্নে শাশ্বত কল্যাণ ও শান্তির বার্তা নিয়ে গিরিনন্দিনী জগদম্বা আসছেন শিশির সিক্ত ধরনীর বুকে। সাতক্ষীরাসহ চারিদিক সেজেছে বর্ণিল সাজে, সর্বত্র ধ্বনিত হচ্ছে মা আনন্দময়ী মহামায়ার আগমনী বার্তা।সাতক্ষীরা জেলার সব মন্দিরে চলছে দুর্গোৎসব শুরুর প্রস্থুতি। ভাস্কররা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমার সৌন্দর্য বর্ধন ও দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে। তবে অধিকাংশ মন্দিরে দুর্গাদেবীর আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। কোথায়ও কাজ চলছে রং তুলির আঁচড় লাগানোর।মহামারী করোনাকালে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পূজার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে পূজার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মন্ডপে মন্ডপে ধুপ আর ধুনো সুগন্ধি সুবাতাশ ছড়াবে চারিদিকে। ঢাক, ঢোল, কাঁশড়, বাঁশি, শঙ্কধ্বনিী আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হবে ‘শারদীয় দুর্গোৎসব’।হিন্দু, মুসলিম, বৈদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আনন্দে একাকার হয়ে যাবে। এটি যেন বাঙ্গালীর এক মিলন মেলা, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জগতিক সকল পাপ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে মায়ের কাছে আরাধনা করবেন। দেবীর কাছে সঠিক পথের দিক কামনা করবেন, আগামী ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবীকে বিদায় জানানো হবে।সাতক্ষীরা সদর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শ্রী গৌর চন্দ্র দত্ত বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১০৮টি পূজা ম-পে শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, আগামী ১০ অক্টোবর মহাপঞ্চমীতে সায়ংকালে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এরপর ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা এবং সায়ংকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ১২ অক্টোবর শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর মহাসপ্তমীতে নবপ্রত্রিকা প্রবেশ, সপ্তমী বিহিত পূজা এবং দেবীর ঘোটকে আগমন। ১৩ অক্টোবর শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর মহাষ্ঠমী কল্পারম্ভ ও মহাঅষ্টমী বিহিত পূজা। ১৪ অক্টোবর শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর মহানবমীতে বিহিত পূজা এবং ১৫ অক্টোবর শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর বিজয়া দশমীতে বিহিত পূজা সমাপন ও বিসর্জন, বিজয়া দশমী কৃত্য ও দেবীর দোলায় গমন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকি গ্রামের প্রতিমা ভাস্কর শ্রী অজয় কুমার পাল বলেন, এবছর দুর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজের চাপ গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তাই দিন রাত পরিশ্রম করে মা দুর্গার প্রতিমা তৈরি করছি। এখন প্রতিমার রঙের কাজ চলছে। ২/৩ দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্যাংদহ গ্রামের মৃৎশিল্পি মধু দাস বলেন, কাজের অনেক চাপ থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে।সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল সার্বজনীন পূজা মপের সভাপতি শ্রী শম্ভু কুমার দে বলেন, মানুষের মনে করোনার ভয় থাকায় আনন্দ ছিল না। কিন্তু এবার মা মহামায়ার কৃপায় করোনা কমে যাওয়ায় সবার মনে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাই এবার মানুষ দুগাপূজায় মেতে ওঠেছে। পূজা ভালোভাবে কাটবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।কলারোয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিদ্ধেশ্বর চক্রবর্তী জানান, এবছর কলারোয়া উপজেলা ব্যাপী ৪৪টি সার্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্টিত হবে। এবার কয়েকটি মপে অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় থাকতে পারে।আশাশুনি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী রনজিৎ কুমার বৈদ্য জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরেও আশাশুনি উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের সর্বমোট ১০৬টি মপে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।সাতক্ষীরা জেলা কেন্দ্রীয় মন্দির সমিতির সভাপতি শ্রী বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, সাতক্ষীরা জেলা ব্যপী শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে তাঁদের প্রস্তুতি শেষের দিকে। সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে যে মনিটরিং সেল আন্তরিকভাবে কাজ করলে কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।শ্রী বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, এবার সাতক্ষীর জেলার ৭টি উপজেলায় ৫৮১টি পূজা ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১০৮টি, কলারোয়ায় ৪৪টি, তালায় ১৮৮টি, আশাশুনিতে ১০৬টি, দেবহাটায় ২১টি, কালিগঞ্জে ৪৯টি এবং শ্যামনগরে ৬৫টি মন্ডপে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসব’ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পূজা মপে পুলিশ, র্যাব, আনছার ও ভিডিপির পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ও আইনশৃংখলা বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবে। পূজা মন্ডপ এলাকায় কোন বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা ব্যপী শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সকল ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে সর্বদা সজাগ রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
Leave a Reply