আশিফুজ্জামান সারাফাত
চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন কুঁলগাও বালুচরা এলাকায় সাবেক সেনা সদস্যের প্রভাব দেখিয়ে চাঁদাবাজীর মিথ্যে মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে বারবার অভিযোগ, নানা মুখী হয়রানীসহ সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগে সিরাজুল মাওলা ও শিরিন আক্তারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
আজ ১ এপ্রিল (শনিবার) বেলা ৩ চট্টগ্রামের বালুচরার একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভুক্তভোগী আলহাজ্ব নাসির কোম্পানি ও তার পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী আলহাজ্ব নাসির কোম্পানি বলেন আমি বালুচরা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আমি ২০০৮ সালে সন্দ্ধীপের সিরাজুল মাওলার নিকট ২ গন্ডা রাস্তা বিহীন চাষাবাদের জমি বিক্রি করি। সেই থেকে সিরাজুল মাওলার সাথে আমার পরিচয়। পরবর্তীতে সিরাজুল মাওলা উক্ত জায়গায় টিনসেট বাড়ী নির্মান করেন। তার চলাচলের রাস্তা প্রয়োজন হলে ২০১০ সালে আমি হজ্বে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে আমাকে অনুনয় বিনিনয় করে তার পাশে বসবাসরত আমার ভাই ও বোনদের জায়গা থেকে চলাচলের একখানা রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আমি সরল বিশ্বাসে আমার ভাই ও বোনদের রাজি করিয়ে চলাচলের ৪ ফুট প্রসস্ত রাস্তা দিতে সম্মত করাই। যার বিনিময়ে সিরাজুল মাওলা আমাকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন। চেকের প্রদত্ত তারিখ অনুযায়ী আমি টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেলে সেখানে তার একাউন্ট শূন্য পায়।
টাকার ব্যাপারে সিরাজুল মাওলাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমার ভগ্নি পতির দোহায় দিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ভীত্তিহীন গল্প সাজিয়ে টাকা না দেওয়ার পায়তারা করেন। আমি সেই সময় তার চেক ফেরৎ দিয়ে আর কখনও রাস্তার ব্যাপারে আর কোন সহায়তা করব না বলে পরিস্কার জানিয়ে দিই।
পরবর্তীতে ২০২১ সালে আমার বোন ও ভগ্নিপতিরা আমার কাছে জানাতে চান সিরাজুল মাওলা উক্ত জায়গায় বিল্ডিং তৈরী করছেন ব্যাপারটি আমি জানি কিনা । সেইসময় আমি জানায় এলাকাটিতে আমার যাতায়ত না থাকায় বিষয়টি আমি জ্ঞাত নয়। এরকিছু দিন পর সিরাজুল মাওলা তার চলাচলের জন্য জোড় পূর্বক রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে আমার ভগ্নিপতি ও বোনের সাথে তুমুল ঝগড়া হয়। সেই সময় আমি উভয় পক্ষের ঝগড়া থামাতে ৯৯৯ এ কল করে আইনী সহায়তা চাইলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার এএসআই জাহাঙ্গীর উভয় পক্ষের ঝগড়া থামিয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য উভয় পক্ষকে থানায় যেতে বলেন। থানায় বৈঠকের মাধ্যমে সিরাজুল মাওলার ১ লক্ষ ৭০ হাজার প্রাদান সাপেক্ষে চলাচলের জন্য ৬ ফুট বাই ৪০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত দেন। যাতে তিনি সম্মত হয়ে আমাকে ২টি খালী ষ্ট্যাম্প প্রদান করেন।
উক্ত বৈঠকের সপ্তাহ খানেকের সিরাজুল মাওলা ও তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ভোল পাল্টে সাবেক সেনা সদস্যের দাপট দেখিয়ে কোন টাকা দিতে পারবেন না বলে ষ্পস্ট জানিয়ে দেন। সিরাজুল দম্পতি আরো জানান তাদের ৮ ফুট বাই ৪০ ফুট রাস্তা লাগবে।
এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এএসআই জাহাঙ্গীর আবারো উভয় পক্ষকে মীমাংসা পূর্বক ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সিরাজুল মাওলার চলাচলের জন্য ৮ ফুট বাই ৪০ ফুট রাস্তার ব্যবস্থা করে দিতে সম্মত করায়।
এবারেও বরাবরের মত সিরাজুল মাওলা ও তার স্ত্রী শিরিন আক্তার এই মীমাংসাও অগ্রায্য করেন।
সেই সময় থেকেই সিরাজুল মাওলা সেনা সদস্যের প্রভাব কাটিয়ে আমাকে ও আমার বোনের পরিবারকে নানা রকম হয়রানী করতে থাকে। আমার নিরুপায় হয়ে আদালতে উক্ত ১৪৫ করলে সিরাজুল মোল্লা ১৪৭ করেন।
একই সময়ে সিরাজুল মাওলা প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে সেনা বাহিনীর সৈনিক হওয়ার সুবিধা নিয়ে আমার উপর জোর প্রয়োগ করতে থাকে ও নানা রকম হয়রানী করে আসছেন । আরো প্রচার করেন জায়গা দিলে কেন রাস্তা দিবে না বলে ।
এক পর্যায়ে সিরাজুল মাওলা ও শিরিন আক্তার আরো বেপরোয়া হয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ১০ লক্ষ টাকার অভিযোগ তুলেন হাটহাজারী র্যাব ক্রাইম জোনে। অভিযোগের এক মাসের মাথায় র্যাব এর সিনিয়র অফিসার আলমগীর সাহেব বিরোধপূর্ণ জায়গায় উপস্থিত হয়ে আমাদের সব ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আমাদের মীমাংসার জন্য র্যাব হাটহাজারী ক্রাইম ব্রাঞ্চে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। তখন তিনি সমস্ত তথ্য উপাত্তের পর্যালোচনা করে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কোন প্রকার চাঁদাবাজীর প্রমান না পেয়ে সিরাজুল মাওলার কাছে ভিত্তিহীন চাঁদা বাজী মামলার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি। সেসময় তিনি সিরাজুল মাওলা কে এটাও বুঝান যে মানুষ একটি রাস্তার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আর আপনি রাস্তা দিচ্ছে উল্টো উনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলা করছেন। আপনি থানার মীমাংসা হয় সেটিও মানেন না কেন। এক পর্যায়ে অফিসার আলমগীর মীমাংসার প্রস্তাব করলে উভয় পক্ষ ৩ জন ৩ জন প্রতিনিধি নির্ধারন করে বিষয়টি নিষ্পত্তির সালিশি বৈঠক হয়। বৈঠকে ৮ ফুট ৪০ ফুট রাস্তার জন্য মূল্য ১২ লক্ষ টাকা নির্ধারন করে সিরাজুল মাওলাকে ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করতে বলে। আরো প্রস্তাব করা হয় সিরাজুল মোল্লা যদি তার পিছনের লোকজনদের চলাচলের ৪ ফুট জায়গা রাস্তার ব্যবস্থা করে দেন। তাহলে এক টাকাও দিতে হবে না। সে সময় সিরাজুল মাওলা ক্ষিপ্ত হয়ে এক ফুট জায়গাও ছাড়বে না বলেন। মীমাংস না মেনে চলে আসেন।
পরবর্তীতে সিরাজুল মাওলা পুনরায় আমার ও আমার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। উক্ত মামলার তদন্তে বায়েজিদ থানার ওসি কামরুজ্জামান ও এসি বেলায়েত উক্ত বিরোধপূর্ন জায়গায় গিয়ে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটানোর জন্য স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি মেজর সিদ্দিক, লোকমান, বক্তিয়ার ও রাসেল সহ বেশ কয়েক জনকে দায়িত্ব দেন। ওনারা সকলে বালুচড়ার হোটেল জামানে বসে ২ লক্ষ টাকা প্রদান পূর্বক চলাচলের জন্য ৮ ফুট বাই ৪০ ফুট রাস্তার জায়গা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে উভয় পক্ষের মতামত জানতে চাই সেই বৈঠকে আমি ও আমার পরিবার স্থানীয়দের মীমাংসা মেনে নিলেও সিরাজুল মাওলা পুনরায় মীমাংসা না মেনে আমার ও আমার বোনের পরিবারের ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দেন। সেই সময় বটতলী বিটের ইনচার্জ নুর নবী নেতৃত্বে থানার বৈঠক ও অমান্য করেন তিনি।
এবার সিরাজুল মাওলা আরো বেপরোয়া হয়ে র্যাব ৭ বরাবর আমি, আমার ভগ্নিপতি ইদ্রিস, প্রফেসার মিলন ছোট ভাই ইকবাল ভাতিজা আরিফসহ অপরাপর সদস্যের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজীর অভিযোগ করেন। এই অভিযোগে র্যাব ৭ এর নির্দেশে আমি র্যআব ৭ এ গেলে তারা জানতে চান বিরোধপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে মিমাংসা করে দিলে আমরা মানব কিনা। এমন প্রস্তাব আমরা মেনে নিলেও সিরাজুল মাওলা না মেনে আবারো বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের হয়রানী করতে থাকে।
ভুক্তভোগী আলহাজ্ব নাসির কোম্পানি আরো বলেন, ইতিমধ্যে এই রাস্তার ব্যাপারে থানা পর্যায়ে ৬ বার, র্যাব ৭ এ ১ বার, র্যাব হাটহাজারী ক্রাইম জোনে ১ বার ও সামাজিকভাবে ২ বার মীমাংসা হলেও সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যের প্রভাব কাটিয়ে সবকিছু সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বারবার আমাদের নামে হয়রানী ও মামলা করে যাচ্ছে।
এরইমধ্যে সিরাজুল মাওলা আবারো আমার আমার বোনের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এটিএম আদালতে আরো একটি ৭ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজীর মামলা ও পিবিআই তে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের কাছে তার এবং বোনের পরিবার ও আত্মিয়স্বজনের বিরুদ্ধে সিরাজুল মাওলার বারবার মিথ্যা মামলা হয়রানী ও অভিযোগ হতে বাঁচতে সহযোগীতা কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভোক্তভোগী জেসমিনা বেগম ও মালেকা বেগম অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেনা সদস্যোর নাম ভাঙিয়ে এই ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও মিথ্যা থেকে রেহাই পেতে সর্ব মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তারা আরো বলেন সিরাজুল মাওলার খুঁটির জোড় কোথায় তিনি কার দাপটে এমন ব্যপরোয়া তা বের করে আশু বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সকলের সহযোগীতা চান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন
মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ ইদ্রিস, মোঃ মাসুদুল করিম, মোহাম্মদ লোকমান, রাসেলসহ এলাকার শতাধিক স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। যারা সকলের এলাকার সৎজন আলহাজ্ব নাসির কোম্পানি ও তার আত্মিয় স্বজনদের বিরুদ্ধে সন্দ্ধীপের সিরাজুল মাওলা ও শিরিন আক্তারের হয়রানি ও মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান । এরই সাথে সকলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাবেক সেনা সদস্যের দাপট দেখানো সিরাজুল মাওলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোড় দাবি জানিয়েছেন।