জুয়েল খাঁন,সিলেট জেলা প্রতিনিধিঃ
সিলেটে অনিয়মে জড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে ৩৫ কর্মকর্তার বদলির আদেশ জারি করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে কোতয়ালী ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিসহ মহানগর পুলিশের ১১ কর্মকর্তা রয়েছেন। এর বাইরে রয়েছেন সিলেট রেঞ্জের ৮ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ও ১৬ জন সার্জেন্ট।
বদলি হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, রাজধানীতে ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পদের মালিক-এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের নানা অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ (পিপিএম) জানিয়েছেন , একই স্টেশনে যারা ৫ বছর ছিল-তাদেরকে বদলি করা হয়েছে। সিলেট রেঞ্জে যোগদানের পর যারা দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনের দায়িত্বে ছিলেন-তাদের বদলি শুরু করেন বলে জানান ডিআইজি। পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ায় বদলি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই।
সিলেট মহানগর পুলিশের(এসএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি. এম. আশরাফউল্লাহ তাহের জানিয়েছেন , কোতোয়ালী ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিসহ ১১ জনকে বদলির আদেশ জারি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এরই মধ্যে বদলির আদেশ এসএমপি’তে পৌঁছেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা এসএমপি থেকে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে , দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলা পুলিশে কর্মরত সিলেট জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা এনামুল হককে সুনামগঞ্জ জেলায় , একই জেলার টিআই তপন তালুকদার, টিআই মিজানুর রহমান ও টিআই ডিএম মারিকুল ইসলামকে মৌলভীবাজার জেলায় , মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের টিআই মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, টিআই মো. রফিকুল ইসলাম ও টিআই মো. আবু সাঈদকে সিলেট জেলায় এবং সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত টিআই মো. শামসুল আলমকে সিলেট জেলায় বদলি করা হয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সিলেটের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ৮ ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকে (টিআই) জনস্বার্থে বদলির আদেশ জারি করা হয়।
বদলি হওয়া ৮ ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এনামুল হক ও শামসুল আলম বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দারা খোঁজ পেয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাটসহ বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় এই দুই ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, সিলেট জেলায় কর্মরত সার্জেন্ট উজ্জল রায়কে সুনামগঞ্জ জেলায়, সার্জেন্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও সার্জেন্ট সঞ্জয় দাস, সার্জেন্ট মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম তালুকদার, সার্জেন্ট বিশ্বজিৎ সামন্তকে বর্তমান কর্মস্থল সিলেট জেলা থেকে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে। এছাড়াও, মৌলভীবাজার জেলায় কর্মরত সার্জেন্ট কামরুল হাসান রিয়াদকে সুনামগঞ্জ জেলায় ও সার্জেন্ট বিরুপাক্ষ দাস পার্থ , সার্জেন্ট কুতুব উদ্দিন, সার্জেন্ট জসিম আনছারী, সার্জেন্ট মো. রাহনামায়ে জাহানকে মৌলভীবাজার জেলা থেকে সিলেট জেলায় বদলি করা হয়।
হবিগঞ্জ জেলায় কর্মরত সার্জেন্ট তাজুল ইসলাম শাওনকে সিলেট জেলায়, সার্জেন্ট মোস্তাফিজুর রহমানকে মৌলভীবাজার জেলায়, সুনামগঞ্জ জেলায় কর্মরত সার্জেন্ট নিকুঞ্জ চন্দ্র দেবনাথকে হবিগঞ্জ জেলায়, সার্জেন্ট রূপন চন্দ্র পালকে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে। সার্জেন্ট হামিদুর রহমানকে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে সিলেট জেলায় ও সার্জেন্ট ঝন্টু বৈদ্যকে সুনামগঞ্জ জেলা থেকে হবিগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়েছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর রোববার সিলেটের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম অপর আরেক আদেশে ১৬ সার্জেন্টকে বদলি করেন। জনস্বার্থে তাদেরকে বদলি করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশ এসএমপি’র কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদ ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলামকে ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিতে বদলি করে পুলিশ সদর দপ্তর। একইভাবে আলোচিত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মফিজুর রহমানকে ঢাকায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন), দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রোকনুজ্জামানকে এপিবিএনে , কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মামুনুর রশীদ এবং মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই এস আবু রায়হান নূরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশে , এএসআই মাহফুজকে এপিবিএনে , এটিএসআই মো. মুজিবুর রহমানকে খুলনা মহানগর পুলিশে , কনস্টেবল কলিম উদ্দিনকে এপিবিএনে , কনস্টেবল তাপস চন্দ্রকে শিল্প পুলিশে ও কনস্টেবল মো. মারাজ মিয়া তালুকদারকে এপিবিএনে বদলি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
গত ২ সেপ্টেম্বর ২ ওসি (পুলিশ পরিদর্শক), ৪ এসআইসহ মহানগর পুলিশের ১১ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। হঠাৎ করে সদর দপ্তর থেকে জারি হওয়া বদলির আদেশের খবরে নগর পুলিশের অভ্যন্তরে তোলপাড় শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই বদলির ব্যাপারে নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবহিত ছিলেন না। আদেশ আসার পরই তারা এ বিষয়ে অবহিত হন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ‘সিলেটের পুলিশ কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ,ঘুষ বাণিজ্য , একই স্টেশনে বছরের পর বছর বহাল তবিয়তে থাকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের নিজস্ব গোয়েন্দারা তদন্ত করেন। তাদের তদন্তে সিলেট রেঞ্জ ও সিলেট মহানগর পুলিশে কর্মরত বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উঠে আসে। কিছুদিন আগে প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দপ্তরে সংশ্লিষ্টরা জমা দেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।