সিলেটে নির্বাচন এলেই দেখা মিলে অনেক প্রবাসীর। নির্বাচনে প্রার্থীও হন তাদের অনেকে। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ইউপি নির্বাচনেও আটজন প্রবাসী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে আবার তিনজন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নও পেয়েছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সিলেট প্রবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানকার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বাস করছেন। বিভিন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে-পরে সিলেটের প্রায় সব এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক প্রবাসী নির্বাচনী মাঠে থাকেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেও কেউ কেউ মনোনয়ন পান। আবার অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হন।
দ্বিতীয় দফায় সিলেট জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কার্যালয় থেকে পাওয়া প্রার্থীদের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, সিলেটের ১৫টি ইউপিতে মোট ৭১ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউপিতে দুজন এবং মোগলগাঁও ইউপিতে একজন প্রবাসী প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউপিতে তিনজন, দেওয়ানবাজার ইউপিতে একজন এবং পূর্ব পৈলনপুর ইউপিতে একজন প্রবাসী প্রার্থী হয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জয়নাল আবেদীন ও সমছুল হক। জয়নাল ফ্রান্সপ্রবাসী এবং সমছুল বাহরাইনপ্রবাসী। সমছুল বাহরাইন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহসভাপতিও। তবে একাধিকবার তাদের মুঠোফোনে কল করা হলেও তারা সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. হিরন মিয়া যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। হিরন মিয়া জানান, ১৯৮১ সালে তিনি প্রবাসী হয়েছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি দেশে আছেন। মাঝে মাঝে প্রবাসে যাওয়া-আসা করেন।
বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নে তিনজন প্রবাসী প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মো. আমিরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মহিবুল রহমান এবং ইতালিপ্রবাসী মো. আব্দুর রহমান। আমিরুল ইসলাম গতবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন।
আব্দুর রহমান বলেন, তিনি ২০০৫ সালের পর থেকে ইতালিতে নিয়মিত যাওয়া-আসা করলেও দেশেই বেশির ভাগ সময় কাটান। তাই তাকে এক অর্থে প্রবাসী বলাও ঠিক নয়।
আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি ১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হয়েছিলেন। তবে ২০০৩ সাল থেকে দেশে বাস করছেন।
বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ছহুল আব্দুল।
বালাগঞ্জের উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এবার মনোনয়ন পাননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হয়েছিলেন। মতিন বলেন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হলেও কখনো এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রবাসীরা নির্বাচনে অংশ নেন, এটা সিলেট অঞ্চলে নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে বিষয়টি নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে।