বঙ্গোপসাগর পাড় সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চরের আলোরকোলে প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর ৩ দিনব্যাপি রাস উৎসব হয়ে থাকে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবটি জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা আর বন বিভাগের সহায়তায় জেলে মহাজনরা এ মেলাটির আয়োজন করে থাকে। কিন্ত এ বছর সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে পুণ্যার্থী ছাড়া রাসমেলা উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ওই সময় সুন্দরবনে ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। আর এ উৎসবকে ঘিরে এবার হচ্ছে না রাসমেলা নামে কোন উৎসব।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এ বিষয় নিয়ে তার সম্মেলন কক্ষে সুন্দরবনেন রাস পূর্ণিমা, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা ও নারী-পুরুষদের পুণ্যস্নান উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা ডাকেন জেলা প্রশাসক মোহম্মাদ খালিদ হোসেন। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাফিজ আল আসাদ, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম, দুবলার চরে রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় তিন দিনব্যাপী শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ রাস পূর্ণিমায় পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য। সুন্দরবনের পরিবেশ, বনের বন্যপ্রানী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবার পুণ্যার্থী ছাড়া অন্যদের ওই সময় সুন্দরবনে ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। উৎসবকে ঘিরে হবে না রাসমেলা বলে সির্ধান্ত নেওয়া হয় এ বৈঠকে।
রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসসমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বঙ্গোপসাগরের চর আলোরকোল এলাকায় বসে পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করে, যাতে তাদের সব পাপ মোচন হয়।
জেলা প্রশাসক মোহম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, করোনাকালীন সময় প্রায় দুই বছর আলোর কোলের রাসমেলা ও পুণ্যস্নান বন্ধ ছিল। পরে কিছুটা সিথিল হলেও এবছর সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষার্থে বঙ্গোপসাগর পাড় আলোর কোলে রাস পুর্ণিমায় পূজা আস্রনায় হিন্দু সম্প্রদয়ের ব্যাতিত মুসলিম কোন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেনা বলে নির্দেশনা রয়েছে। শুধু মাত্র হিন্দু সম্প্রদয়ের নারী-পুরুষ সেখানে গিয়ে ভরা পূর্ণিমার দিন ভোরে সূর্যোদয়ের সময় পূজা আর্চনা করে চলে আসবে। তাই আলোর কোলে প্রবেশের জন্য সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রুট নির্ধারণ করা রয়েছে, সেখান থেকে তারা প্রবেশ করবে। তবে রাস উৎসবকে ঘিড়ে এখানে চোরা হরিণ শিকারী, দুর্বৃত্ত ও অন্যান্যদের ঠেকাতে সর্বক্ষনিক বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রস্তুক করে রাখা হবে।
তবে বন বিভাগ বা সরকারের আইন অমান্য করে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানায় তিনি।