গাইবান্ধা প্রতিনিধি: টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট ও যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। তবে এখনও ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট, কাটাখালী ও যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটার ভরতখালিতে নদী ভাঙনও থামেনি। জেলা প্রশাসক ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর হইতে বালাসী ঘাট পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার চলমান কাজ পরিদর্শন করেন ।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত নিম্নাঞ্চল ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, খাটিয়ামারী, ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ও যমুনা নদীবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিস্তা, ঘাঘট নদীবেষ্টিত সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানির স্রোতে বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই এলাকার লোকজনের মাঝে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। বসতবাড়িতে বন্যার পানি উঠায় গবাদিপশু নিয়ে অনেকে পড়েছেন বিপাকে। তবে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা বা তথ্য এখনও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
জেলার ৩৩টি পয়েন্টে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে স্রোতের তীব্রতাও। এতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে নদী ভাঙন। ফলে গত দুই সপ্তাহে নদী ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারীসহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, প্রতি বছর বন্যায় হলদিয়া ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বছরও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছ। গত ৩ দিনের পানি বৃদ্ধি দেখে মনে হচ্ছে চলতি সপ্তাহে বন্যা দেখা দিতে পারে।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের বসিন্দা আব্দুল মালেক জানন, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে নদীর পানির চাপ বেশি। বানি বৃদ্ধির সাথে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল জানান, ভরতখালী ইউনিয়নের পানি বৃদ্ধির সাথে নদী ভাঙ্গন বেড়ে যাওয়ায় হুমকিতে একটি গুচ্ছ গ্রাম।
ফুলছড়ি উপজেলার বাজে ফুলছড়ি গ্রামের বাসিন্দা কলিম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, যেভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের বৃদ্ধির ফলে ফসলি জমি, পাটখেত, শাকসবজি খেত তলিয়ে গিয়ে বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে ।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, ঘাঘট নদীর পানি শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, ঘাঘট ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিকেলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর হইতে বালাসী ঘাট পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার চলমান কাজ পরিদর্শন করেন এবং কাজের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ টি এম রেজাউর রহমান, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান, গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডাক্তার এবিএম আবু হানিফ, গাইবান্ধা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসার ইদ্রিস আলী, ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হানসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ।