গত ১৪ বছরে ৬০৪ জনকে গুম করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সব গুমের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আসকের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার (২৯ আগস্ট) এই দাবি জানানো হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধান প্রতিরোধ দিবস। এর আগে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গুমের শিকার সব নিখোঁজ ব্যক্তিকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা, প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন, দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুমের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানাচ্ছে। একইসঙ্গে গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করে গুম প্রতিরোধে সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০০৭ থেকে ২০২০ (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা অভিযোগ তুলেছেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ৮৯ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন ফেরত এসেছে। অন্যদের বিষয়ে সুর্নিদিষ্ট তথ্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়নি।
এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, সাংবাদিক বা মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বিশেষ বাহিনী-র্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। প্রায়ই সংশ্লিষ্ট বাহিনী তাদের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে। পরিচিত কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রেই আলোচনা বা আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং উদ্ধারের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুম হওয়ার কিছুদিন পর হঠাৎ করেই তাদের কোনও মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় বা ক্রসফায়ারে তাদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। যারা ফিরে আসতে পেরেছেন তাদের ক্ষেত্রেও কী ঘটেছে তা জানা যায় না।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গুমের ঘটনা বরাবর অস্বীকার করা হলেও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার ব্যবস্থার আওতাধীন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ কমিটি এ বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তিবিরোধী সনদের আওতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়। এ পর্যালোচনায় অঘোষিত আটক, যাকে কমিটি অন্তর্ধান বা গুম হিসেবে বর্ণনা করেছে। সেই বিষয়টিতে কমিটি বলেছে, এভাবে আটককৃত ব্যক্তিকে যদি হত্যা করা হয় অথবা তিনি ফিরে আসেন−যাই ঘটুক না কেন, তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে গুম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
কমিটি তাদের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে সব আটক ও আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত বাহিনীর বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা দ্বারা দ্রুততার সঙ্গে পরিপূর্ণ তদন্ত সম্পাদন করা এবং গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনের মাধ্যমে ‘গুম’কে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদটি স্বাক্ষর করার সুপারিশ করে।
গুম প্রতিরোধ দিবসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র সব গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানায় আসক। একটি ন্যায় ও মানবাধিকার ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করতে হবে বলেও তারা মনে করে। আসক গুমের ঘটনা প্রতিরোধে এবং ভুক্তভোগী ও পরিবারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়।