1. admin@surjodoy.com : Main : Admin Main
  2. dainiksurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
  3. editor@surjodoy.com : Daily Surjodoy : Daily Surjodoy
জীবনে প্রথম সামনাসামনি আবৃত্তি শোনা
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক দ্বীন ইসলামের উপর মাদক সম্রাট মাসুদ পারভেজের হামলা, নিন্দা প্রকাশ বিভিন্ন সংগঠনের ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতাকারী হিসেবে ৭শত ছাত্রকে নিয়োগ দিবে সরকার রাজশাহী বাঘা উপজেলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়ন কাজের শুভ উদ্বোধন।  সাভারে ছিনতাইকারীদের হামলায় নিহত এক ভুয়া নিবন্ধনে ১৪ বছর চাকুরী করছেন রোজিনা খাতুন খাজরা ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান ডালিম গ্রেফতার লোহাগড়া উপজেলায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর বিএনপি’র কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত বিমানবন্দর থানা এলাকায় সাত ছাত্রদের ওপর উঠিয়ে দিল প্রাইভেটকার লোহাগাড়ায় ক্রয়মূল্যে তরি-তরকারি বিক্রি করে অন্যন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করল সংগঠনটি মা হারালেন সাতক্ষীরার মঞ্জিতপুরের ইঞ্জিনিয়ার শেখ মনিরুজ্জামান মনি

জীবনে প্রথম সামনাসামনি আবৃত্তি শোনা

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১০.৩৫ এএম
  • ৭৭১ বার পঠিত
ফাইল ছবি

৬০ সালের মাঝামাঝি থেকে ৮০ সালের প্রথম দিকে ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলের চোখে কেমন ছিল দেশটি? পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে একটা নতুন দেশের জন্ম হলো সেই ছেলের চোখের সামনে। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে কী কী ধরা পড়েছিল? স্কুলে স্যারদের কানমলা, বন্ধুদের সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট দুষ্টুমি, নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়ানো, অবাক বিস্ময়ে চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধ দেখা এবং তার সবই একটি মধ্যবিত্ত, সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসেবে। এসব নিয়েই আমেরিকা প্রবাসী আজাদুল হকের ধারাবাহিক লেখা– আমার শৈশব– আমার কৈশোর…

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের গল্প, টিলো এক্সপ্রেস, সাতচারা খেলা, টেনিস বল দিয়ে বোম্বাসটিক খেলা, জীবনের প্রথম বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয়, প্রথম সিনেমা দেখা, গ্রামের গল্প, পাটখড়ি দিয়ে সিগারেট খাওয়ার গল্প, জ্বিনের কোলে বসার গল্প, এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার গল্প আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প– এ রকম নানা ধরনের ছোট ছোট পর্ব নিয়েই আজাদুল হকের ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি শনিবার। খুবই সাদামাটা গল্প অথচ প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এবং সহজপাঠ্য। পড়তে পড়তেই শেষ। একটি পর্ব পড়লেই মনে হবে পরের পর্বে কী হবে? এভাবে তার সঙ্গে আপনারাও ফিরে যেতে পারবেন সেই শৈশবে।

আজাদুল হক টেক্সাসের হিউস্টন শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি একজন তড়িৎ প্রকৌশলী, আমেরিকার ৩য় বৃহত্তম এনার্জি কোম্পানির একটি আইটি ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করেন। তিনি আগে কাজ করেছেন নাসাতে। তবে এসব টেকনোলজি নিয়ে কাজ করলেও তার মন পড়ে থাকে সাহিত্যে, কবিতায়, লেখালেখিতে। এ ছাড়া শখ হিসেবে তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইন করেন, থ্রি-ডি অ্যানিমেশন করেন, ডকুমেন্টরি নির্মাণ করেন, ছবি তোলেন।

পর্ব- ৬.

আমরা একদিন ক্লাস করছি এমন সময় হেডস্যার (হাফিজুদ্দিন স্যার) সাথে আরেকটা ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের ক্লাসে হাজির। আমরা একটু অবাক কারণ সাধারণত হেডস্যার ক্লাস বিঘ্নিত করতে আসেন না, আর আসলেও স্কুলের কাজে আসতেন সাথে দপ্তরি নিয়ে। হেডস্যার আসাতে আমরা একটু নড়েচড়ে বসলাম। ওই দিন আমি আবার একদম সামনের বেঞ্চে ছিলাম। এই জন্য সবকিছু জ্বলজ্বল করছে এখন মনের আয়নায়। আমাদের যে স্যার পড়াচ্ছিলেন- তিনি থামলেন, হেডস্যার তাঁর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে কী যেন বললেন। দেখলাম স্যার খুব আগ্রহ ভরে মাথা নেড়ে সায় দিলেন। তারপর হেডস্যার আমাদের সামনে এসে বললেন, ‘আজ তোমাদের সামনে তোমাদেরই এক বড়ভাইকে উপস্থিত করেছি। ও এই স্কুল থেকেই পাস করেছে। আজ ও তোমাদের আবৃত্তি করে শোনাবে।’

আমাদের এবার ডাবল অবাক হবার পালা। বলে কী, ক্লাস বাদ দিয়ে আবৃত্তি? এই সংস্কৃতির ব্যাপার-স্যাপারগুলোতে আমি আবার ছিলাম (এখনও আছি) পুরোদস্তুর বেগুণ। মানে গুণের ধারে-কাছেও আমি নেই। গান, বাজনা, নাচ- এগুলো আমার কাছে ছিলো দেখার বিষয়, করার নয়। আর ওই দিনের আগ পর্যন্ত আবৃত্তি যে আলাদা কোনো বিষয় হতে পারে, তা আমার মাথায় ঢোকেনি। আমার কাছে আবৃত্তি মানে ছিলো ছড়া বলা। রেডিওতে শুনতাম, টেলিভিশনে দেখতাম- একদল বাচ্চা ফেরদৌসি রহমানের সামনে বসতো, আর বলতো- ‘আপা, আপা, আমি একটি ছড়া বলবো’। সেই পর্যন্তই ছিল আমার ধারণা আবৃত্তি সম্পর্কে। তাই যখন স্যার বললেন, এই ভাইয়া আমাদের সামনে ক্লাস বন্ধ করে আবৃত্তি শোনাবেন, তাতে আমার অবাক না হয়ে আর উপায় আছে?

সেদিন সেই ক্লাসটি ছিল দুপুরের পরের একটা পিরিয়ডে। বাইরে তুখোড় রোদ। আমাদের ক্লাসটা ছিল একতলায় এবং মাঠের পাশেই। ঘাড় ঘোরালেই দেখা যেত মাঠ। আমার স্বভাবই ছিল প্রায়ই এই মাঠের সবুজ ঘাসের দিকে তাকিয়ে দিবাস্বপ্নে মশগুল হয়ে থাকা। প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে বাস্তব থেকে আলাদা করে ফেলে নিজের ভেতর আনাগোনা করার এই অভ্যাস আমার ছেলেবেলা থেকেই। আজ এই এতো বছর পরও দেখছি সেই অভ্যাস চলে তো যায়নি বরং এখন তা আরো বেশি উপভোগ করি। কথাগুলো বলার কারণ আছে।

আমাদের সেই ভাই আমাদের সামনে এসে স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘আমি যে কবিতাটা আবৃত্তি করবো তার নাম ডাহুকের ডাক’। আমি জীবনে এই নাম শুনিনি। এরপর বহুদিন খুঁজেছি কবিতাটি, পাইনি। যা হোক, কথাটা বলার পর তিনি যখন শুরু করলেন– ডাহুকের ডাক বলে, আমার মনে হলো আমার শরীরে কে যেন একটা ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে! কী সেই দরাজ গলা, কী বাচনভঙ্গী, কী বিশাল মূর্ছনা, কী অপূর্ব সুন্দর গলার ওঠানামা! আমি সম্পূর্ণভাবে মগ্ন হয়ে, বিমোহিত হয়ে, নিষ্পলকে শুনলাম, জানলাম, উপভোগ করলাম- আবৃত্তি কাকে বলে।

অনেকক্ষণ ধরে কোনো কাগজ না পড়ে তিনি আবৃত্তি করেই যাচ্ছেন। আমি বাইরে তাকালাম মাঠের দিকে। অমনি চট করে আমি যেন স্টার ট্রেকের সেই ম্যাটার ট্রান্সমিট করার মেশিনের মধ্যে দিয়ে চলে গেলাম অন্য জগতে। প্রতিদিন আমি এই মাঠের দিকে তাকাই, কিন্তু আজ তা আমার কাছে অন্য রূপে। আমি শুনছি ডাহুকের ডাক আর ভেসে বেড়াচ্ছি যেন বিলের পার ঘেঁষে, কাদাপানিতে পা ডুবিয়ে, নলখাগড়ার ঝোপের ভেতর। কোনো আবৃত্তি যে এতো সুন্দর হতে পারে, তা আমার ধারণায় ছিল না।

আমরা অনেক সময় এই গান, কবিতা, আবৃত্তিগুলোকে সস্তা বিনোদন হিসেবে দেখি, শুনি। কিন্তু এই গান, কবিতা আবৃত্তিই যে আমাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। এদের সাথেই যে আমাদের স্মৃতি, সুখ, দুঃখ ওতপ্রোতভাবে জড়ানো- তা আমরা বুঝতে চাই না। এই শিল্পকে যেসব শিল্পী আমাদের সামনে উপস্থিত করেন তাদের আমরা অনেক সময় হেয় করি, ছোট করে দেখি। তাদের মূল্যায়ন তো দূরের কথা, মনে করি টাকা দিলেই তাদের মূল্যায়ন হয়ে যাবে। তারা সামান্য ভুল করলে তাদের ছাল-পাখনা তুলে লবণ-মরিচ লাগিয়ে দেই। অথচ নিজের জীবনের পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এই শিল্পীরাই রংতুলি দিয়ে এঁকে দিয়েছেন আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় জমানো সেই স্মৃতিগুলো। সেদিনের সেই নাম না জানা ভাইয়া, আমাকে যে ভীষণভাবে মুগ্ধ। আলোড়িত করেছেন তার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে তার সামান্য এক কবিতা দিয়েই শিখিয়েছেন- কিভাবে আবৃত্তি আত্মস্থ করতে হয়। একজন বাচিকশিল্পীর সেটাই সবচেয়ে পরম পাওয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews