বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় আলোচনায় এক শ্রেণীর ব্যক্তিকে যারা স্বল্প শিক্ষিত এবং বিভিন্ন দরগাহ ও সুফিবাদে ( সাদুবাধে ) বিশ^াসী, তারা বেলায়াত ও মারেফাত নামে দু’টি অধ্যায়ের আলোচনা শুরু করে। যে আলোচনার মাধ্যমে তারা ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পালন করা থেকে নিজেদেরকে বাচাঁনো বা লুকানোর চেষ্টা করে।
আজকে আমরা বেলায়াত কাকে বলে, বেলায়াতের অর্থ ও এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।
বেলায়াত একটি আরবী ভাষার শব্দ, আরবী ভাষায় শব্দটি ওয়ালাইয়াত হিসেবে উচ্চারিত হয়, এর আভিধানিক অর্থ বন্ধুত্ব ।
অলী শব্দটি একবচন এর বহুবচন আওলীয়া। ইসলামী পরিভাষায় এর আভিধানিক অর্থ হল বন্ধু বা নিকটবর্তী।
তাই ইসলামী পরিভাষায় বেলায়াত এবং ওলী শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয় আল্লাহর বন্ধুত্ব ও আল্লাহর বন্ধু বা নিকটবর্তী অর্থে।
আরবী ভাষায় তরীক বা তরীকত অর্থ হল রাস্তা। ফার্সী ভাষায় রাস্তাকে “ রাহ” বলে। তাই ফার্সি ভাষার ‘রাহে বেলায়াত’ আরবী ভাষায় হয় ‘ তরীকুল ওয়ালাইয়াত, যার বাংলা অর্থ হয় বন্ধুত্বের রাস্তা।
আর আওলীয়া আল্লাহ বা ওলী আল্লাহ এর বাংলা অর্থ হল আল্লাহর বন্ধু বা নিকটবর্তী।
ইমান এর শাব্দিক অর্থ বিশ^াস। ইসলামের পরিভাষায় ইমান হল, তাওহীদ ও রিসালাতের প্রতি বিশুদ্ধ, শিরক ও কুফর মুক্ত বিশ^াস কে ইমান বলে।
তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হল আত্বরক্ষা করা। ইসলামের পরিভাষায় তাকওয়া হল, যে কর্ম বা চিন্তা করলে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্টি হন, সেসব কর্ম বা চিন্তা বর্জনের নাম তাকওয়া। বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদদের পরিভাষায় তাকওয়া হল, আল্লাহ ও তার রসূলের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ, অবৈধ ঘোষিত বা অনুৎসাহিত সকল পাপ কর্ম বর্জন করাকে তাকওয়া বলে।
তাই উপরে উল্লেখিত ভাষ্য থেকে আমরা বুঝতে প্রত্যেক মুসলীমই আল্লাহর অলী বা বন্ধু। ইমান ও তাকওয়ার গুন যার মধ্যে যত বেশী থাকবে, তিনি ততবেশী আল্লাহর অলী, বন্ধু বা নিকটবর্তী।
হানাফি মাজহাবের অন্যতম চিন্তাবিদ বা ফকিহ ইমাম আবু জাফর তাহাবি ‘ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের’ আক্বীদাহ বা বিশ^াস বর্ননা করে বলেন, সকল মুমিন করুনাময় মহান আল্লাহর অলী। তাদের মধ্যে থেকে যে যত বেশী আল্লাহর অনুগত ও কুরানের অনুসরনকারি, তিনি ততবেশী আল্লাহর নিকট সম্মানিত। ( ইমাম তাহাবি আল আক্বীদাহ, পৃ : ৩৫৭ – ৩৬২)
তাই ইমান ও তাকওয়া এ দুু’টি গুন যার মধ্যে যতবেশী এবং যত পরিপূর্ণ হবে, তিনি ততবেশী ( রাহে বেলায়াত বা তরিকুল ওয়ালাইয়াত ) বন্ধুত্বের রাস্তায় অগ্রসর ও ততবেশী আল্লাহর ওলী বা আল্লাহর নিকটবর্তী হিসেবে বিবেচিত হবে।
লেখক : যোবায়ের হোসাইন ( সাংবাদিক ও লেখক )
Leave a Reply