পরিব্রাজক :
কোলকাতা যাওয়ার পথে-
বেনাপোল স্থ্ল বন্দর-
আমি আর একবন্ধু কোলকাতা যাচ্ছি। আমি ব্যবসায়ী উনি চাকুরীজীবী। যথারীতি ভ্রমণ কর ১০০০/= টাকা জমা দিয়ে ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দিলাম। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমার ব্যবসায়ীক ট্রেডলাইসেন্স এবং বন্ধুর ছুটির কাগজ দেখতে চাইলো অথচ এসব কাগজ ইন্ডিয়ান ভিসা নেয়ার সময় জমা দিতে হয়েছে। আমি ট্রেড লাইসেন্স এর সফট কপি মোবাইল গ্যালারিতে খুঁজতে থাকলাম কিন্তু দেরি হচ্ছিল। ভদ্রলোক বন্ধুর হাতে একটি পাসপোর্ট হাতে দিয়ে বল্লেন আপনাদের একটি সহজ সমাধান দেই। পাসপোর্টের মধ্যে ৫০০/= টাকা করে দিন। আপনাদেরকে ছেড়ে দেই। ৫০০/ টাকা দিয়ে পাসপোর্ট দু’টি ওনার হাতে দেয়ার সাথে সাথে দুইটি পাসপোর্টে সিল দিয়ে ফেরত দিলেন। ওনার এধরণের সহযোগিতায় আমরা মুগ্ধ হয়ে পেট্রাপোল ( ভারত) স্থল বন্দরে ঢুঁকে পরলাম। উনি এ ধরণের সহযোগিতা না করলে আমাদের ঢাকা এসে আবার ট্রেড লাইসেন্সের কপি নিয়ে ওনার সম্মুখে হাজির হতে হইতো। তখন হয়তো উনি বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট চেয়ে বসতেন।
কোলকাতা ফিরে আসা-পেট্রাপোল বন্দরঃ
পার্ক স্ট্রীট থেকে দুই বন্ধু ট্যাক্সি যোগে ১.৩০ টায় পেট্রাপোলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম, কেননা ঐ সময় পেট্রাপোলগামী কোনো এসি বাস ছিল না । পেট্রাপোল বর্ডার ৬ টা পর্যন্ত খোলা। প্রচণ্ড গরম। একদিন পরই ভোটের ফলাফল তাই থাকাটা নিরাপদ মনে করলাম না। মূলত ভিসার মেয়াদ ১৬/৬/২৪ শেষ তাই তাড়াহুড়া করে বাংলাদেশ থেকে কোলকাতায় যাওয়া। কথিত আছে না গেলে, না – কী পরবর্তীতে ভিসা দেয় না। ট্যাক্সি যোগে আসছি। ড্রাইভার বিজেপির সমর্থক। পথে পথে উনি মমতা ব্যানার্জীর গোষ্ঠী উদ্ধার করলো। বাংলায় কোনো উন্নয়ন হয় নাই। মমতা ক্ষমতায় না আসলে বাংলাদেশ তিস্তার পানি পাবে। উনার কথায় আমরা খুশি হলাম। মুসলমানদের জন্য মমতা কিছুই করে নাই শুধু অনুষ্ঠানে গিয়ে অভিনয় করে। পেট্রাপোল পর্যন্ত ২০০০/ টাকা ভাড়া। খুব আরামে বর্ডারে পৌঁছলাম। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন কেন ভারত এসেছি? বললাম ভ্রমণে। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কী বল্লেন আমি বললাম ভ্রমণে। সম্ভবত উনি অন্য কিছু শুনতে চেয়েছিলেন। অমার ভিসা যেহেতু ভ্রমণ তাই অন্য কিছু কেন বলবো? ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে সিল মেরে ছেড়ে দিলেন। সামনে ইমেগ্রেশন পুলিশ। আমিসহ আরও দুই জনকে ডেকে রুমে ঢুকালেন। জিজ্ঞাসা করলেন কতো টাকার বাজার করেছি। আমি বললাম ১০০০০/= ( দশ হাজার) , বন্ধুটি ও বললেন ১০০০০/=( দশ হাজার) অন্যজন বললেন ৫০০০/= টাকার বাজার। আমাদের দুইজনকে দিতে হবে ৫০০/= টাকা করে, অন্যজনকে ২০০/= অন্যথায় পাসপোর্ট চাইলো। আমরা টাকা দিয়ে পার পাইলাম। লাগেজ ২ বার স্ক্যানিং করা হলো, কোলকাতা যাওয়ার সময় শুধু প্যান্ট, শার্ট শরীরে রেখে বাকী সব স্ক্যানার দিয়ে চেক করা হয়েছিল। এতোকিছু পার হয়ে আসলাম বেনাপোল অর্থাৎ বাংলাদেশে। ঢোকার পরেই একজন আইনের লোক পাসপোর্ট দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কী করি? পেশা বললাম, উনি বুঝতে পারলেন না, পরে বাংলায় অনুবাদ করে বললাম। এরপর বাংলাদেশে ঢোকার সিল মারার পালা। হঠাৎ নেট বিভ্রাট। লোকজনের ভিড় বাড়তে লাগলো। প্রচণ্ড গরম। তাদের মাথার উপর ফ্যান, আমাদের মাথার উপরের ফ্যান ঘুরে নাঅর্থাৎ নষ্ট। অথচ দুই বর্ডারেই এসি থাকা উচিত ছিল। পথে একজন জিজ্ঞাসা করলো বোতল- টোতল আছে কী -না। বললাম না ভাই। বের হয়ে দেখে গেটে বিজিবি। চেক করলো না। এরপর বেনাপোলে শ্যামলী বাসের কাউন্টারে আসলাম। পথে অনেক বাসের দালালরা ব্যাগ ধরে টানাটানি করছিল। গাড়ী ছেড়ে কিছুদুর আসতেই বাস থামলো। জিজ্ঞাসা করায় কন্ডাকটর বললো বিজিবি চেক পোস্ট। বাসের মধ্যে উঠে তিনজন মোটাসোটা লোককে নিচে নামিয়ে কিছুই পেল না। আমরা তখন আল্লাহর নাম জপছিলাম যাতে আমাদের নামতে না বলে। কেননা এখানে তাদের ইচ্ছায় যা কিছু ঘটতে পারে। যাহোক গাড়ি চেক পোস্ট থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হলো। আমার মনে হয় পৃথিবীর কষ্টদায়ক, ঝামেলাযুক্ত, হয়রানীমূলক স্থলবন্দরের একটি বেনাপোল -পেট্রাপোল স্থল বন্দর। মানুষ এই বন্দর পার হওয়ার সময় সর্বদা ভয়ে থাকে, এই মনে হয় ধরলো অথচ মানুষ যায় ঘুরতে অথবা চিকিৎসা করাতে। এখানে সেবার মান বাড়েনি বরঞ্চ অত্যধিক সময় লাগায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরে অথচ দেখার কেউ নেই।