মাইনী যৌবন হারিয়ে এখন মরা খালে পরিনত
ইদ্রিছ আলী দীঘিনালা প্রতিনিধি
Facebook Twitter share
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র নদীর নাম মাইনী৷ মাইনী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক মাইনী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ০৫।
Surjodoy.com
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের লংতরাই ও লুসাই পর্বতসহ অসংখ্য পাহাড়ি স্রোতের মিশ্রণে এ নদীর সৃষ্টি৷ অতীতে মাইনী নদীর অববাহিকায় ত্রিপুরা জাতির রিয়ংগণরা বসবাস করত। এ উর্বর উপত্যকায় প্রচুর পরিমানে ধান উৎপাদন হতো। ত্রিপুরা ভাষায় ‘মাইনী হা’ অর্থ ধানের দেশ৷ এভাবেই মাইনী নদীর নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
The Daily surjodoy
ষাটের দশকের আগেও মাইনী উপকূল ছিল রিজার্ভ এলাকা। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে শত শত গ্রামের উদ্বাস্তু হওয়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য ১৯৬৫ সালে মাইনী উপকূল রিজার্ভ খুলে দেওয়া হয়। তখনই মাইনী উপকূলে ব্যাপকহারে জনবসতি বাড়তে থাকে। এসব ক্রমবর্ধমান বসতিগুলো নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে দীঘিনালা।
The Daily surjodoy
চীরসবুজ মাইনী নদী। সারা বছরই এ নদীর দুইধারে ধান আর নানান রকমের সবজির চাষ হয়। মাইনী নদীকে নির্ভর করে তার দুপাশে গড়ে উঠেছে শত শত গ্রাম। এই গ্রামগুলোতে বসবাস করা হাজার মানুষের সুখ-দুঃখের সাক্ষী হয়ে মাইনী নদী বিরামহীন ভাবে বয়ে চলেছে যুগের পর যুগ। যদিও এই নদীর কথা আমাদের অনেকেরই অজানা।
The Daily surjodoy
বর্তমান অবস্থা: দীঘিনালার প্রাণ এই মাইনী নদীর বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। শীর্ণকায়, মুমূর্ষু দশা নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে এ নদী। দুপাশে ফসলি সবজি চাষের বদলে এখন তামাক চাষই বেশি দেখা যায়। তামাক চাষে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করা হয়। আর সেই সাথে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার তো আছেই। এই রাসায়নিক বর্জ্য আর বিষ ক্রমাগত মিশে যাচ্ছে মাইনী নদীর পানিতে। ফলে মাইনী নদীর জীববৈচিত্র এখন হুমকির মুখে।
The Daily surjodoy
আগে মাইনী নদীতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত, এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না। টুকটাক যে মাছগুলো মাইনীতে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো খাওয়াও হয়ে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। দিঘীনালায় শত শত তামাক চুলা রয়েছে, এ চুলাগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার টন পাহাড়ি কাঠ পুড়ানো হয়। বন জঙ্গলও ধ্বংস হচ্ছে ব্যাপকহারে। যার ফলে পাহাড় ক্ষয়ে মাইনী নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
The Daily surjodoy
এভাবে পাহাড় ক্ষয়ে নদী ভরাট হওয়ায় বর্ষার সময় নদীর নাব্যতা কমে যায়। এছাড়াও পাড় ভাঙন হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। আর চুলাগুলোতে প্রতি মৌসুমে যে হারে তামাকের বিষাক্ত গ্যাস বের হয় তা দীঘিনালার মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সবদিক থেকে হিসেব নিকেশ করে দেখা যায়, মূলত তামাক চাষই এখন মাইনী নদী ধ্বংসের একমাত্র মূল কারণ।
The Daily surjodoy
মধ্য বোয়ালখালী গ্রামের সন্তু চাকমা জানান, একসময় বাবুছড়ার উপরিভাগের বনভূমি থেকে বিপুল পরিমাণে বাঁশের ছানি দীঘিনালা হয়ে রাঙ্গামাটির মাইনীমূখ পর্যন্ত যেতো। তবে নদীতে অসংখ্য চর জাগায় ব্যবসায়ীরা এখন সড়কপথে বাঁশ নিয়ে যায়। তবে যে পরিমাণে চর জাগছে তা এখনই খনন করা প্রয়োজন৷ তাছাড়া নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় অল্প বর্ষায় প্লাবিত হচ্ছে ছোট মেরুং, বোয়ালখালী, হাচিনসনপুর সহ গুরুত্বপূর্ণ বিশাল এলাকা। এ বন্যায় প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে জন দুর্ভোগ।
The Daily surjodoy
মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন বলেন, দীঘিনালা উপজেলার একটি জনবহুল ইউনিয়ন হলো মেরুং। প্রতিবছর এ ইউনিয়নে ৩-৪ বার বন্যায় প্লাবিত হয় বিস্তৃত এলাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষক ও ব্যবসায়ী সহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ৷ জনগন আশ্রয় নেয় বিদ্যালয়গুলোতে। মানুষ চলাচল করে নৌকা দিয়ে। বন্যার সময় টানা প্রায় এক সপ্তাহ দীঘিনালা-লংগদু সড়ক বন্ধ থাকে৷
The Daily surjodoy
খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অ.দা.) নুরুল আফসার জানান, ইতিমধ্যে মাইনী নদী খনন, চর কাটিং ও ড্যাম নির্মাণের জন্য জরিপকরে একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। করোনা পাদুর্ভাব কেটে গেলেই আমরা কাজ শুরু করবো।
Like this:
Like Loading...
Related
এ জাতীয় আরো খবর..