1. dailysurjodoy24@gmail.com : admin2020 : TOWHID AHAMMED REZA
যুদ্ধ দিনের স্মৃতি : বীর মুক্তিযোদ্ধ আব্দুস সামাদ বসুনিয়া 
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০১:০১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নৈতিক স্খলন ও আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদে  বিক্ষাোভ ও পথসভা  *ঝিনাইদহে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে স্যালাইন ও ঠান্ডা খাবার পানীয় বিতরণ* বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদশার ব্যাপক গণসংযোগ। সাভার উপজেলার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জনসহ মোট ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ভিজিডি কাড না দেওয়ায় সৈয়দপুর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও পথসভা নৈতীক স্খলন ও সিমাহীন আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদে সৈয়দপুর পৌর মেয়রের অপসারনের দাবীতে \ সংবাদ সম্মেলন টেলিভিশন ক্যামেরা র্জানালিস্ট অ্যাসোসয়িশেন (টিসিএ) নেতৃত্বে   সোহলে ও জুয়েল কলাতিয়া বাজারের যানজট ও ফুটপাত দখল মুক্ত করলেন কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ি “বাংলাদেশ সূফী ফাউন্ডেশন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রমজান মাসে যাত্রা শুরু করবে” নীলফামারীতে উৎসবমুখর পরিবেশে চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

যুদ্ধ দিনের স্মৃতি : বীর মুক্তিযোদ্ধ আব্দুস সামাদ বসুনিয়া 

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩, ১১.১০ এএম
  • ১৬৯ বার পঠিত

তিন দিনের যুদ্ধে ২৭ জন খান সেনাকে হত্যা করি

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী

২৩ মার্চ উর্দুভাষীদের অত্যাচারে নিস্পেষিত সৈয়দপুরের বাঙ্গালীদের সাহস সঞ্চারিত হয় ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষনায় উদ্বেলিত হয়ে এ জনপদের তরুন ছাত্রলীগ নেতা মো: আব্দুস সামাদ বসুনিয়া মহান যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

গতকাল শহরের বাইপাস মহসড়কের বসুনিয়া মোড়ের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কথা হয় এ বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে। একান্ত আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলির নানা ঘটনা স্মৃতি রোমন্থন করেন দৈনিক জনকন্ঠ এর কাছে। এ বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের বসুনিয়া পাড়ার ফজলার রহমানের ৬ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে সবার বড় আব্দুস সামাদ বসুনিয়া। পরিবারের দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হত।

নিয়ামনুবর্তিতা আর শৃঙ্খলার মধ্য থাকতে হত তাকে। তবে জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেছেন এ শহরের উর্দুভাষীরা সামান্য অজুহাতে কিভাবে নির্যাতন চালাত বাঙ্গালীদের ওপর। এটা বরাবর পিড়া দিত শিশু হৃদয়ে। তারা শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, চাকুরীসহ সকল প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় বাঙ্গারীরা বৈষম্যর শিকার হতেন। কোন প্রতিবাদ ছিল না।

১৯৫২ সালে ঢাকায় মহান ভাষা আন্দোলনের জেরে এ শহরের উর্দুভাষীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাঙ্গালীদের ওপর নিপিড়ন বাড়িয়ে দেয়। অবশেষে এমন অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দাড়ান ১৯৬৭ সালে। সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে মহান ২১ শে ফেব্রæয়ারী মহান মাতৃভাষা দিবসে সহপাঠিদের নিয়ে কালো ব্যাজ পড়ে শহরময় বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে আইযুব খানের ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন নামে ছাত্র সংগঠনের সাথে সংর্ঘষ বাঁধে।

পাকিস্তান সরকার এসএসসির পাঠ্যসূচিতে তাদের ‘কৃষ্টি ও সভ্যতা’ নামের একটি বই সংযোজন করে। এর বিরুদ্ধে সারাদেশের সাথে এ শহরেও বাঙ্গালী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন। আর ১৯৭০ সালে সৈয়দপুর কলেজে এইচএসসিতে অধ্যায়নকালীন সময়ে ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ সৈনিক হিসাবে কাজ করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বসুনিয়া বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানি সেনানিবাস থাকায় উর্দুভাষীদের অত্যাচার বেড়ে গিয়েছিল। এতে যুদ্ধের আবহ গড়ে উঠেছিল এ শহরে। বাঙ্গালীরা অপেক্ষায় ছিলেন জাতীর জনকের নির্দেশনার। ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষনে ইঙ্গিত পেয়ে ২৩ মার্চ সকাল ১০ টায় শহরের রাবেয়া মোড় থেকে মিস্ত্রিপাড়ার সামান্য দুরত্বে সাতনালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহতাব বেগ কাধে রাইফেল নিয়ে কয়েকশত গ্রামবাসিকে নিয়ে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।

সেখানে বাঙ্গালীরা লাঠি, বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্রে আক্রমন করে। এ সময় বিপরিত দিক থেকে আসা একটি গুলিতে শহীদ হন মাহতাব বেগ। এতে বাঙ্গালীরা পিছু হটে। তারা শহীদ মাহতাব বেগের দেহ থেকে মাথা বিছিন্ন করে শহরময় আনন্দ মিছিলে অবরুদ্ধ বাঙ্গালীদের ভীতি প্রদর্শন করে। যে কেউ পাকিস্তানে বিপক্ষে যাবে, তার অবস্থা তেমন হবে।

কয়েকদিন যাবত উর্দুভাষীরা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের চিহ্নিত করে। শহীদ মাহতাব বেগের সাথে তরুন এ ছাত্রলীগ নেতার কথা জানতে পেরে তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। আর এ ঘটনার পরই কাউকে না জানিয়ে বোনের বাড়ি নীলফামারীর চড়াইখোলাায় পালিয়ে যান। সেথান থেকে বন্ধু মশিয়ার, সহিদার মিলে হলদিবাড়ি হয়ে ভারতের জলপাইগুড়িতে প্রশিক্ষন ক্যাম্পে যান। ব্রাভো নামক ওই ক্যাম্পের মেজর আর পি সিং এর অধীনে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। ২৮ দিনের প্রশিক্ষন শেষে ওই ক্যাম্পে জুনিয়র লিডার প্রশিক্ষক হিসাবে যোগ দেন।

প্রশিক্ষন শেষে ষ্টেনগান ও এসএলআর নামক আধুনিক সমরাস্ত্র কাধে নিয়ে ভারতের হিমকুমারী সিমান্ত দিয়ে ৬শত প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে দুই ভাগে ডিমলার মুক্তাঞ্চলে প্রবেশ করেন। ডিমলা থানায় আশ্রয় নেয়া পাক সেনা ও রাজাকারদের সাথে দুই ঘন্টা ধরে ৬ নং সেক্টর কমান্ডার খাদেমুল বাশারের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চলে গোলাগুলি। চল্লিশ-চল্লিশ করে দুটি মুক্তিযোদ্ধার দল ক্লোরিংয়ে ফায়ার করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

এ সময় পাক সেনারা পিছন থেকে ঘিরে হামলা চালায়। ওই যুদ্ধে ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ১৭ জন আহত হয়েছিলেন। অবশেষে কুলাতে না পেরে পিছু হটে হানাদারেরা। পরে তাদের লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে ওই থানা ভবনে মেজর চৌহান, মেজর ছাতোয়ান, মেজর আরপি সিং ও ক্যাপ্টেন ইকবালসহ মুক্তিযাদ্ধারা আশ্রয় নেয়। ওই দিন বীরমুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে মুক্ত হয় নীলফামারীর ডিমলা থানা।

মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, রাতে খান সেনারা ভীত হয়ে ডিমলা থেকে ডোমার প্রবেশের বোরাগাড়ি ব্রীজ উড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ব্রীজের নিচ দিয়ে বোরাগাড়ি প্রবেশ করেন। এ সময় ব্রীজের ওদুরে কাশফুল ঝাড়ের আড়ালে গভীর বাংকার হতে গুলি করেন পাক সেনা। এতে ৬ জন আহত হলে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে যায় ডিমলা ক্যাম্পে। সেখান থেকে পরিকল্পিত ভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ভাবে কমান্ডারের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জলঢাকার মিরগঞ্জ পাঠানপাড়ায় উর্দুভাষী রাজাকারকে ধরে কমান্ডারের নির্দেশে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করেন এ বীরযোদ্ধা।

১০ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কিশোরীগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সেখানে হাসপাতাল ও থানা প্রাঙ্গনে ছিল পাকসেনাদের বড় ক্যাম্প। কিশোরীগঞ্জ প্রবেশের পরই শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। তিন দিন ধরে চলে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষন। এতে ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে কিশোরীগঞ্জ দখল মুক্ত হয়।

রংপুর অভিমুখে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এরই মধ্যে ওয়ারলেসে খবর আসে পাকিস্তানিরা ঢাকায় আত্মসর্মপন করবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এমন সুখের খবরে উল্লাসে ফেটে পড়ি। পরস্পর কোলাকুলি করে বিজয়ের ¯েøাগান দিয়ে জন্মভুমি সৈয়দপুরে রওয়ানা দেই। ডিমলায় একটি বাড়িতে ১৫টি এন্টি ট্যাংক মাইন নিস্ক্রিয়ের সময় বিধ্বস্তে ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। প্রায় ২০ শতক এলাকায় গভীর পুকুরে পরিণত হয়। সে বিস্ফোরনের বিকট শব্দ এখনও শিহরন জাগায়। বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সম্মানী ভাতা প্রর্বতন, মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, চাকুরী কোটা, বীরনিবাস, ঈদ, বিজয় দিবস ও পহেলা বৈশাখ ভাতা ব্যবস্থাপনা ব্যাপক মর্যাদা প্রদানে সেই ক্ষতের প্রলেপ দেন। এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্বাধীনতার পরবর্তি এ শহরে আওয়ামী লীগ নেতারা যুদ্ধপোরাধীদের নিজ দলে আশ্রয়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরন ঘটায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সাবেক এ কমান্ডারের।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..

Comments are closed.

© All rights reserved  2020 Daily Surjodoy
Theme Customized BY CreativeNews